1. বেশি নম্বর পেয়েই বাধভাঙ্গা খুশি হই : বেশি নম্বর পাওয়া অবশ্যই আনন্দের বিষয় তবে আনন্দে দিশেহারা হওয়া যাবে না। প্রশ্নের মান অনুযায়ী নম্বর পেতে হবে। যেমন ৩৫তম, ৩৭তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় ধারণা করা হয় পাস নম্বর ছিল ১০০ এর চেয়ে কম এবং ৪০তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় ছিল ১০০ এর আশেপাশে। তাই অতি আনন্দ অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের কারণ হতে পারে এবং যার ফলাফল না বোধক হতে পারে। ভার্সিটির এক ছোট ভাই ১৩০-১৪০ পেত মডেল টেস্ট দেবার সময় কিন্তু ৬-৭টি প্রিলিমিনারি পরীক্ষা দিয়েও সে আজও পাস করতে পারে নাই। তাই আবেগ নিয়ন্ত্রণ করা শিখতে হবে। বিজয়ের হাসি রেজাল্টের দিনই হাসব ইনশাল্লাহ।
2. কম নম্বর পেলে হতাশ হয়ে পড়ি : বেশি নম্বর পেয়ে আত্মহারা হবার পাশাপাশি কম নম্বর পেয়েও হতাশ হওয়া যাবে না। পড়া, অনুশীলন বা কৌশলের ঘাটতির কারণে প্রথম দিকে নম্বর কম আসতে পারে। তাই বারবার মডেল টেস্ট দিয়ে নিজের সেরাটা বের করে আনতে হবে। বুঝে ফেলতে হবে নেগেটিভ মার্কিং কতটা ক্ষতি করছে। কতটা রিস্ক নিলে নম্বর বেশি আসছে। এসব বিষয়ের উপর তীক্ষ্ণ নজর রাখতে হবে। ধীরে ধীরে বেশি নম্বর পাওয়ার কৌশল আয়ত্ত করতে হবে। খেলা সাঙ্গ দেওয়া যাবে না। ফুটবল খেলার মত ৯০ মিনিট প্লাস অতিরিক্ত সময়ও সর্বোচ্চ ট্রাই করার মন মানসিকতা থাকতে হবে।
3. নির্দিষ্ট বিষয়ের প্রাপ্ত নম্বর খেয়াল করি না : মডেল টেস্ট দিয়েই আমরা ক্ষান্ত। মোট কত পেলাম সেটা নিয়েই মহাব্যস্ত কিন্তু নির্দিষ্ট বিষয়গুলোতে কত পেলাম সেদিকে খেয়াল অনেকেই করি না। আপনি হয়ত বাংলা সাহিত্যে কম নম্বর পাচ্ছেন কিন্তু মোট নম্বর বেশি পাচ্ছেন তাই বিষয়টা আড়ালেই থেকে যাচ্ছে। তাই সব বিষয়ের প্রাপ্ত নম্বরের উপর গুরুত্ব দিতে হবে। তাহলে আরও ভালভাবে প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব। পর্যাপ্ত সময় পেলে নিজের দুর্বলতাগুলোকে ঘষেমেজে চাকচিক্য প্রদান করা সম্ভব।
4. খুব কম রিস্ক নেই : কেউ কেউ ১০০% নিশ্চিত না হয়ে এন্সার করতে চায় না। আমি নিজেও একসময় সে দলে ছিলাম। ফলাফল মোটেই সুখকর ছিল না। নেগেটিভ মার্কিংকে বেশি পাত্তা দেওয়ার কারণে আমার মোট নম্বর কমে আসত। তারপর অভিজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী স্ট্র্যাটেজি পরিবর্তন করলাম। নম্বর ইতিবাচকভাবে বেড়ে গেল। সেই সাথে আত্মবিশ্বাসের পারদের স্তরটাও উপরে উঠে গেল। আসল পরীক্ষাতেও এর ইতিবাচক ফলাফল পেলাম।
5. খুব বেশি রিস্ক নেই : ভয় পেয়ে কম দাগান যেমন একটা নির্বুদ্ধিতা, তেমনি বেশি দাগানও একটা নির্বুদ্ধিতার পরিচয়। ২০-২৫% বা তার চেয়ে বেশি নম্বর যদি নেগেটিভ মার্কিং এর কারণে চলে যায় তাহলে রেজাল্টের পর এক বুক হতাশা ছাড়া হয়ত আর কোন কিছুই সঙ্গী হবে না। তাই সময় থাকতে সাবধান হয়ে যান। Calculative risk নিতে হবে।
6. বেশি বেশি মডেল টেস্ট দেই : মডেল টেস্ট দেওয়া অবশ্যই ভাল কিন্তু তা যেন কখনও মাত্রারিক্ত হয়ে না যায়। শুধু মডেল দিচ্ছি কিন্তু সেগুলো শুধরে নেবার জন্য পড়ছি না সেটা যেন না হয়। তাহলে কিন্তু দিনশেষে লাভের খাতায় শূন্য থাকতে পারে। পরীক্ষা শুরুর এক থেকে দুই মাস আগে থেকে শুরু করে মোট ১০-২০টা পূর্ণাঙ্গ মডেল টেস্ট দেওয়াই ভাল, আমি মনে করি। আপনি দুই মাস আগে ২-৩টি মডেল টেস্ট দিন। তারপর এক মাস আগে সপ্তাহে ২-৩টি মডেল টেস্ট দিন।
7. পরীক্ষা দিতে বেশি সময় ব্যয় করি : পরীক্ষার হলে ২ ঘণ্টা সময় পাওয়া যায় তাই বলে বাসায় ২ ঘণ্টা সময় নেওয়া মোটেই ঠিক নয়; এখানে তো আর বৃত্ত ভরাট করা, স্বাক্ষর করা ইত্যাদির ঝামেলা নেই। বাসায় হলে এর চেয়ে কম সময় ব্যয় করতে হবে আর কোচিং সেন্টারে হলে ২ ঘণ্টা সময় বিবেচনা করা যেতে পারে। আমার এক ফ্রেন্ড বাসায় মডেল টেস্ট দেবার সময় দেড় ঘণ্টা টাইম সেট করত। সে ৩৬তম বিসিএস নন ক্যাডার থেকে প্রসিকিউটিং অফিসার হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত এবং ১১তম বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা থেকে সহকারী জজ/জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে কর্মরত।
8. এন্সার রিচেক করি না : মডেল টেস্টের যেসব প্রশ্ন নিয়ে সন্দেহ সেগুলো রিচেক করি না। এটা খুবই বাজে একটা অভ্যাস। ঠিক এই প্রশ্নটাই যদি আপনার পরীক্ষায় আসে, আর আপনি যদি এন্সার না করেন বা ভুল এন্সার দেন তাহলে যে সেটা কত বড় ক্ষতি বয়ে আনতে পারে সেটা আল্লাহই ভালই জানেন। ০.৫ এর জন্য প্রিলিতে ফেল করার চেয়ে কষ্ট আর কিছু কি আছে? তাই এন্সার ভেরিফাই করুন; আলস্য ত্যাগ করুন।
9. দেখাদেখি করে মডেল টেস্ট দেই : যেহেতু আসল পরীক্ষা না, তাই দলবেধেঁ দেখাদেখি করে মডেল টেস্ট দিলে কোন ক্ষতি নেই–এই আত্মঘাতী অভ্যাস পরিত্যাগ করতে হবে। আপনি এর মাধ্যমে নিজের পায়েই নিজেই কুড়াল মারছেন। আমাদের ভার্সিটির ফিলিপাইনের এক ম্যাডামের ডায়ালগটা বলতে হচ্ছে It is examination, not a place for discussion। নিজেকে নেপোলিয়নের মত নির্বাসিত মনে করে একা একা পরীক্ষা দেবার প্র্যাকটিস করুন। পারলে একেক দিন একেক বেঞ্চে বসে বা রুমে পরীক্ষা দিন। অবশ্যই honesty is the best policy.
10. নেগেটিভ মার্কিংকে বেশি পাত্তা দেই না : বিসিএস পরীক্ষার প্রিলিমিনারি পর্যায়ে ফেল করার অন্যতম কারণ নেগেটিভ মার্কিং। এটাই বিসিএস পরীক্ষাকে অন্য পরীক্ষা থেকে আলাদা করে রেখেছে। চাপ নেওয়ার ক্ষমতা সবার নেই। চাপে পিষ্ট না হয়ে মাথা ঠান্ডা রাখতে পারলেই সরকারি কর্ম কমিশন আপনাকে অভিনন্দন জানাবে, লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের গ্রিন কার্ড দিবে। তাই মডেল টেস্ট শেষে কত নম্বর নেগেটিভ মার্কিং এর জন্য হারালেন সেটা খুবই মনোযোগের সাথে লক্ষ্য করুন এবং সেটা পরবর্তী পরীক্ষায় শুধরানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করুন। মনে রাখবেন, লোভে পাপ আর পাপে নেগেটিভ মার্কিং।
11. মডেল টেস্ট থেকে কমন আসবে এটা ভাবি : এটা আরেক ধরনের বোকামি। নতুনদের অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে কেউ কেউ এই ফাঁদ পাতে। মডেল টেস্ট থেকে যদি কিছু প্রশ্ন কমন আসে, সেটা আপনার চরম সৌভাগ্য। কিছুই কমন আসবে না এটা ধরে নিয়ে পরীক্ষার হলে যেতে হবে।
12. শুধু মডেল টেস্টে বেশি নম্বর পাবার জন্য পড়ি : কোন প্রতিষ্ঠানের মডেল টেস্টের ফরমেট বুঝে ফেললে শুধু সেখানে ভাল করার জন্য পড়া নিতান্তই বোকামি। আপনাকে বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় পাস করতে হবে তাই সেই সিলেবাসের এবং সেটার প্রশ্নের ধরনের উপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। মডেল টেস্টে ফার্স্ট হবার প্রলোভন দূর করুন। আমরা কি এখনো স্কুলে পড়ি?
আবারও অনুরোধ করছি এসব ভুল করা থেকে শত শত আলোকবর্ষ দূরে থাকুন। নিজের সেরাটা বের করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করুন। আমাদের সাথে থাকুন। ভাল কিছু হবে ইনশাল্লাহ।
ধন্যবাদ।
লেখক : শাহেদ হোসাইন। তিনি ৪১তম বিসিএস নন ক্যাডার থেকে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীন টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের ৯ম গ্রেডের ইনসট্রাক্টর (জেনারেল ইলেকট্রিক্যাল ওয়ার্কস) পদে কর্মরত। যোগদানের পূর্বে তিনি সরকারি একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে “প্রশাসনিক কর্মকর্তা” ছিলেন। এর আগে তিনি ৩৭তম বিসিএস নন ক্যাডার থেকে সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা (কাস্টমস এন্ড ভ্যাট) হিসাবে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। তিনি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স-এ কর্মজীবন শুরু করেন। জয়েন গ্রুপ BCS Hacks ,সাবস্ক্রাইব BCS Hacks এবং ফলো Shahed Hossain
International 1st 2 chp only previous question porle hibe?
নাম লিখুন চ্যাপ্টারের।