নড়বড়ে ইংলিশ, ম্যাথের বেসিক করুন ইস্পাতদৃঢ়

By | 08/11/2020

গাছের গোড়ায় পানি না ঢেলে আগায় পানি ঢাললে সেই গাছ থেকে যেমন বেশি কিছু আশা করা অনুচিত তেমনি বেসিক ক্লিয়ার না করে পড়তে থাকলে সেই পরীক্ষার্থীর কাছ থেকেও বেশি কিছু আশা করা অনুচিত। অন্যভাবে বললে বাড়ি নির্মাণের সময় ফাউন্ডেশন যত মজবুত হবে, আপনি তত উচ্চ অট্টালিকা বানাতে পারবেন। ৫ তলার ফাউন্ডেশনে ২০ তলা বাড়ি বানাতে গেলে সেই বাড়ি ধসে পড়তে ভূমিকম্প নয়, সামান্য হাঁচি কাশিই যথেষ্ট। মূল কথা হচ্ছে চাকরির পরীক্ষায় আপনার সফলতা ব্যাপকভাবে ইংলিশ এবং ম্যাথে পারদর্শিতার উপর নির্ভর করছে। একটাতে দুর্বল হলে অন্যটা দিয়ে কাভার দিতে হবে অথবা দুর্বলতা কাটাতে আশু ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। একটার দুর্বলতা অন্যটা দিয়ে যে কাভার দিতে পারবেন তার কোন নিশ্চয়তা কিন্তু নেই। তাই উক্ত বিষয়ের দুর্বলতা কাটানোই বুদ্ধিমানের কাজ। মূলত বিসিএস পরীক্ষায় অনেক বিষয়ের উপর পরীক্ষায় হয় তাই এখানে এক বিষয়ে নম্বর কম পেলেও অন্য বিষয় দিয়ে সেটা পূরণের সুযোগ থাকে কিন্তু ব্যাংক বা আইবিএ -এর পরীক্ষাগুলোতে ইংলিশ বা ম্যাথে বেসিক সমস্যা থাকলে, আপনার চাকরি পাবার সম্ভাবনা অনেক কমে যাবে; পেলেও অনেক অনেক দেরি হবে বা মনের মত চাকরি পাবেন না। তাই ভেবেচিন্তে টার্গেট সেট করতে হবে এবং সেই অনুযায়ী পড়ালেখা করতে হবে এবং দুর্বলতা কাটাতে হবে।

ইংরেজি

ইংরজির দুর্বলতা কাটানোর জন্য আপনাকে বেসিক গ্রামার নিয়ে স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে। এই স্পষ্ট ধারণার জন্য পি সি দাসের Applied English Grammar and Composition (Anglo-Bengali ভার্সন) বইটা আপনাকে খুবই সাহায্য করবে। প্রতিটি চ্যাপ্টার আপনাকে ভালভাবে বোঝার প্রয়োজন নেই। শুধু যেগুলো বেশি গুরুত্বপূর্ণ যেমন Tense, voice, narration, parts of speech এসব পড়ুন। এসবের প্রথমেই বেশি গভীরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। তাহলে ভয় আরও বেড়ে যাবে। যেমন Tense এর ১২ ধরন পড়ার পরিবর্তে present indefinite, present continuous, present perfect, present perfect continuous, past indefinite, past continuous, past perfect, future indefinite, এবং future continuous  এগুলো পড়লেই আপনার জন্য এখন যথেষ্ট। এগুলো পড়ার পাশাপাশি বিগত বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্ন থেকে ধারণা নিন কেমন প্রশ্ন পরীক্ষায় আসে তাহলে আপনাকে কতদূর আগাতে হবে, কত গভীরে পড়তে হবে এবং আপনার ঘাটতি আরও স্পষ্ট হবে। আসলে English for Competitive Exams by Fazlul Haque বইটিই যথেষ্ট তবে যাদের ব্যাসিক দুর্বল তাদের কারও জন্য বইটি সামান্য কঠিন মনে হলেও হতে পারে তাই রেফারেন্স বই হিসেবে পি সি দাসের বইটির কথা লিখলাম।

গ্রামারের পর আসে ফ্রিহ্যান্ড রাইটিং : যা ইচ্ছা তাই লিখুন। গরু রচনা হলেও লিখুন। প্রতিদিন ৫টি করে বাক্য লিখুন। কিছু মনে না আসলে, জানালার দিকে তাকিয়ে যা চোখের সামনে আসে তাই লিখুন। না পারলে আকাশের দিকে তাকিয়ে আকাশ নিয়ে ৫টি বাক্য লিখুন। এভাবে প্রতিদিন ৫টি বাক্য লিখুন। প্লিজ লিখুন। ১-২ মাস পর আপনার উন্নতি, অগ্রগতি আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন।

এরপর হচ্ছে অনুবাদ। অনুবাদ খুবই গুরুত্বপূর্ণ চাকরির পরীক্ষায়। তাই এখানেও যথেষ্ট নম্বর পেতে হবে। আপনাকে প্রথমেই ডেইলি স্টার থেকে অনুবাদ করতে হবে না। ডেইলি স্টার দিয়ে শুরু করলে আপনি কয়েক সেকন্ডের মধ্যে depressed হয়ে যেতে পারেন; কারণ আমি মনে করি যাদের বেসিক দুর্বল, ডেইলি স্টার তাদের জন্য শুরুতে too much। আপনি প্রথম আলো দিয়েই শুরু করুন। অনলাইনে প্রথম আলোর বাংলা-ইংরেজি দুই ভার্সনই আছে তবে এখন ইংরেজিতে সব আর্টিকেলের ভার্সন বের হতে কয়েক ঘণ্টা দেরি হচ্ছে তাই যেই আর্টিকেলের বাংলা ইংলিশ দুইটাই আছে সেটার প্রথম ৫ লাইন নিজে নিজে ইংরেজিতে অনুবাদ করুন। তারপর ইংরেজি ভার্সন দেখে আপনার অনুবাদ যাচাই করুন। প্রথম দিকে হয়ত বেশি খারাপ হবে কিন্তু ধীরে ধীরে আপনার অনুবাদ ভাল হতে বাধ্য যদি আপনি লেগে থাকেন। আপনার ফ্রিহ্যান্ড রাইটিং বা অনুবাদ বিভিন্ন গ্রুপে পোস্ট করুন। যদি লজ্জা লাগে তাহলে একটা ফেইক একাউন্ট খুলুন আর পোস্ট করুন। চাকরির প্রয়োজনে অনেকেই ফেইক একাউন্ট খোলে। এখানে দোষের কিছু নাই যতক্ষণ না পর্যন্ত আপনি কোন অনৈতিক কাজে লিপ্ত হচ্ছেন। এভাবেই ইংরেজির দুর্বলতা কাটানোর জন্য অনুশীলন করুন। ভাল কিছু হবে ইনশাল্লাহ।

ম্যাথ

ম্যাথে দুর্বল হলে রিস্ক আরও বেশি কারণ এখানে আন্দাজে বৃত্ত ভরাট করাটা আরও জটিল, ঝুঁকিপূর্ণ। ম্যাথের দুর্বলতা কাটানোর জন্য অষ্টম, নবম-দশম শ্রেণির সাধারণ গণিত বইগুলো বেশি বেশি অনুশীলন করুন। মূলত বেশিরভাগ প্রশ্ন এখান থেকেই হয়ে থাকে।আপনি খাইরুল’স ব্যাসিক ম্যাথ বইটিও কিনতে পারেন; বইটিতে সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।  বুঝতে সমস্যা হলে অন্যের সাহায্য নিন। প্রয়োজনে বাসায় ম্যাথ টিউটর রাখুন। আমার এক ফ্রেন্ড ৩৮তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষায় গণিত অংশে (মানসিক দক্ষতা নয়) শূন্য পাওয়ায় বাসায় ম্যাথ টিউটির রেখেছে এবং এর সুফলও পেয়েছে। ৪০তম বিসিএস পরীক্ষায় গণিত অংশে ২০ এর মত এন্সার করেছে এবং সে খুবই খুশি। ম্যাথ আপনার ১০০% পারতে হবে না; আপনি যেন একদমই কম না পান সেদিকে খুব সতর্ক থাকতে হবে। বিসিএস লিখিত পরীক্ষার সময় ৩ ঘণ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী পরীক্ষা দেবার পর ১ ঘণ্টার লাঞ্চ ব্রেক, তারপর ম্যাথ এক্সাম (মানসিক দক্ষতা অন্য দিন হয়)। তাই ম্যাথে বিশেষ গুরুত্ব্ব দিতেই হবে যাতে দেখামাত্র বুঝে ফেলেন।

ভয়ের কথা

যাদের বেসিক দুর্বল, তারা সবাই কিন্তু যাদের বেসিক মজবুত তাদের লেভেলে যেতে পারবে না এবং তাদের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারবে না; এটা আমাদের মেনে নিতেই হবে। তাই আমার পরামর্শ আপনার বয়স যখন ২৮ বা সাড়ে ২৮ হয়ে যাবে, তখন আপনি ৯ম গ্রেডের পাশাপাশি ১০ম গ্রেড বা তার নিচের গ্রেডেও আবেদন করা শুরু করুন কারণ বাস্তবতা বড় নির্মম—সবাই বিসিএস ক্যাডার হবে না যতই চেষ্টা করুক; কাউকে নন ক্যাডার হতে হবে, কাউকে প্রাইমারিতে বা ব্যাংকে চাকরি করতে হবে। তাই সাধ আর সাধ্যের মধ্যে একটা সমন্বয় আনতে হবে। আমার এই লেখাটা আপনার সাধ্যকে বাড়ানোর জন্য লিখেছি যাতে আপনি সাধ পূরণের আরও কাছাকাছি যেতে পারেন। লেখাটি ভাল লাগলে বা আপনাকে সামান্যতম নির্দেশনা প্রদান করতে পারলেও আমার এই চেষ্টা সার্থক।

আপনার জন্য নিরন্তর শুভ কামনা।

শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

Leave a Reply

Your email address will not be published.