BCS Preliminary and Written Preparation একইসাথে

By | 20/01/2022

মুরগি আগে না ডিম আগে? এটা নিয়ে যুক্তি-পাল্টা যুক্তি চলছে, চলবে। একইভাবে প্রিলিমিনারি আগে না রিটেন আগে না ভাইভা? না কি দুইটা একসাথে এটা নিয়েও পরীক্ষার্থী ও সরকারি চাকরিজীবীদের মধ্যে আলোচনা, সমালোচনা ও পর্যালোচনা কম হয় না। আপনি যেটাই করুন না কেন আপনাকে সফল হতে হবে তবেই আপনার কৌশল গ্রহণযোগ্য হবে। আমার অভিজ্ঞতা থেকে BCS preliminary and written preparation একসাথে নেওয়ার কিছু টিপস শেয়ার করার চেষ্টা করছি। আশা করি উপকৃত হবেন ইনশাল্লাহ।

প্রিলির সাথে রিটেনের প্রয়োজনীয়তা

একটু খেয়াল করলে দেখবেন এখন আগের চেয়ে দেরিতে বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হচ্ছে তাই লিখিত পরীক্ষার তারিখও একটু আগে চলে আসছে। এটা নতুনদের জন্য কিছুটা চ্যালেঞ্জিং বলতেই হবে। তাই কেউ যদি প্রিলিমিনারি প্রস্তুতির সময় রিটেনের প্রস্তুতি কিছুটা নিয়ে রাখে তাহলে তার জন্য চাপ সামাল দেওয়া কিছুটা হলেও সহজ হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে রিটেনকে যেন বেশি গুরুত্ব দিতে গিয়ে প্রিলি যেন মিস না হয়। মূল কথা হচ্ছে সোনার হরিণ নামক সরকারি চাকরি পাওয়ার জন্য লিখিত পরীক্ষার নম্বর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ; প্রিলি হচ্ছে মহারণে শামিল হওয়ার টিকিটমাত্র। খেলা হবে বিসিএস লিখিত পরীক্ষায়।

প্রিলির সাথে রিটেনের প্রিপারেশন না নিলে কি চাকরি হবে না?

কেন হবে না? অবশ্যই হবে। প্রতি বছর শত শত, হাজার হাজার প্রার্থী শুধু প্রিলির প্রস্তুতি নিয়েই চাকরি পাচ্ছেন। তবে মনে রাখতে হবে প্রিলির প্রিপারেশন যেন গোছানো, সলিড হয়। শুধু MCQ বা Digest ভিত্তিক প্রিলি পাস করলে একটা ঘাটতি থেকেই যায় যেটা পরবর্তীতে প্রত্যাশিত ফলাফলের পথে অন্তরায় হতে পারে।

প্রিলির সাথে রিটেন কত সময় পড়ব?

সর্বোচ্চ এক ঘণ্টা বা আপনার প্রতিদিনের পড়ার সময়ের ১০%-২০% সময়। এর চেয়ে বেশি সময় নিলে হিতে বিপরীত হতে পারে। আবারও বলছি ব্যালেন্স রাখতে হবে নইলে আম-ছালা সবই হারাতে পারেন। আপনার আত্মবিশ্বাস না থাকলে শুধু প্রিলির প্রস্তুতি নিন তবে সেটা যেন ভাসাভাসা টাইপ না হয়, বরং বুলেটপ্রুফ টাইপের হয়।

হাতে কত সময় থাকলে প্রিলি রিটেন কম্বাইন্ড করে পড়ব?

মিনিমাম ৬ মাস। এর চেয়ে কম সময় পেলে এইভাবে পড়া যাবে না। হাতে যদি মাত্র ৩ মাস সময় থাকে তখন কিন্তু এভাবে পড়লে সুইসাইড হবে। শেষ ৩ মাস প্রিলিমিনারির পড়াশোনা হবে অন্য রকম

চলুন এবার বিষয় ভিত্তিক আলোচনা শুরু করি।

বাংলা

৩৭তম বিসিএস ও ৪১তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষার প্রশ্ন পর্যালোচনা করলে দেখবেন প্রচুর মূল বক্তব্য, কাহিনি, চরিত্র এই ধরনের প্রশ্ন এসেছে। একটু ট্রিক্স ফলো করলে আপনি অন্যদের চেয়ে এগিয়ে থাকার প্রত্যাশা করতে পারেন। শীকর বিসিএস গ্রন্থ-সমালোচনা বইটি সংগ্রহ করুন। তারপর ৩০-৪০টি খুব গুরুত্বপূর্ণ কাহিনি পড়ে ফেলুন। ভয়ের কিছু নেই বেশি সময় লাগবে না। দিনে সর্বোচ্চ একটি পড়লেই হবে আর প্রতিদিন না পড়লেও হবে। দুই তিন বার রিডিং পড়লেই এনাফ। এটা আপনাকে লিখিত পরীক্ষার জন্য আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে। লিখিত পরীক্ষার বাজারের প্রচলিত বেশিরভাগ গাইডের চেয়ে এখান থেকে কাহিনি সংক্ষেপ পড়াটাই বুদ্দিমানের কাজ। তবে এখানের গ্রন্থ সমালোচনার ফরমেটের চেয়ে আরও গোছানো ফরমেট আছে প্রথম আলো পত্রিকায়।লিখেছেন  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক তারিক মনজুর

বাংলা ব্যাকরণের লিখিত বিগত বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্ন পড়ে ফেলুন। প্রিলির সাথে রিটেনের বাংলা ব্যাকরণ অংশের ব্যাপক মিল। কথা বিশ্বাস না হলে এক বার বিগত লিখিত পরীক্ষার বাংলা ব্যাকরণ অংশ দেখে ফেলুন।কথা মিলেছে?

ইংরেজি

সপ্তাহে ২ দিন প্রথম আলোর সম্পাদকীয় থেকে ৫টি বাক্য অনুবাদ করুন। প্রথম আলোর বাংলা ও ইংরেজি দুই ভার্শনই আছে তবে সব লেখা দুই ভার্শনে পাওয়া যায় না। যেসব লেখা দুই ভার্শনেই পাওয়া যায় সেটা থেকে অনুবাদ অনুশীলন করুন মানে আপনার অনুবাদ মিলিয়ে নিন। অথবা বিগত বিসিএস লিখিত পরীক্ষার ইংরেজি প্রশ্নের অনুবাদ অংশ সলভ করতে পারেন। British Bangla Best Job Translation বইটি দেখতে পারেন বিগত বছরের প্রশ্ন সলভ করার জন্য।

বাংলাদেশ

প্রফেসর মো. মোজাম্মেল হক রচিত একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির পৌরনীতি ও সুশাসন (দ্বিতীয় পত্র) বইটি থেকে মুক্তিযুদ্ধ অংশ খুব ভালোভাবে পড়ে ফেলুন। একই বই থেকে সংবিধানের বিভিন্ন সংশোধনীর বৈশিষ্ট্য পড়ুন। নিয়মিত পেপার পড়বেন। প্রথম আলো সেরা পেপার এটা সন্দেহাতীত তবে সপ্তাহে মিনিমাম ২ দিন জনকণ্ঠ পেপার পড়বেন। এখানে সরকারের উন্নয়ন ফুটিয়ে তোলা হয় অন্য যেকোনো পত্রিকার চেয়ে ব্যাপক পরিসরে।

কারও হাতে যদি ৮-১০ মাস বা আরও বেশি সময় থাকে তাহলে অসমাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারের রোজনামচা, আমার দেখা নয়াচীন ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যেকোনো বই (যেমন : আমি বিজয় দেখেছি) পড়তে পারেন। মনে রাখতে হবে এসব যেন প্রিলির মূল পড়ার চেয়ে ১০-২০% বা দিনে এক ঘণ্টার বেশি না হয়। এই বইগুলো আপনাকে লিখিত পরীক্ষায় ভালো নম্বর তুলতে সাহায্য করতে পারে। আপনি বাংলাদেশ বিষয়াবলির মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন বা বঙ্গবন্ধু বা প্রাসঙ্গিক নিয়ে কোনো প্রশ্ন আসলে উক্তি তুলে দিতে পারেন। আমি ৪১তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষায় কিছু উক্তি দিয়েছি এই বইগুলো থেকে যেমন অসমাপ্ত আত্মজীবনীর ১৯৭ পৃষ্ঠা থেকে উল্লেখ করেছি : Either I will go out of the jail or my dead body will go out. এই কথাটি সোনার বাংলার স্বাপ্নিক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছেন ভাষা আন্দোলনের সময় কারাগারে বন্দী থাকা অবস্থায়।আশা করি বুঝাতে পেরেছি।

আন্তর্জাতিক

চোখ-কান খোলা রাখুন।পেপার পড়ুন তবে পেপার যেন ঘণ্টার পর ঘন্টা পড়া না হয় সেদিকে তীক্ষ্ণ নজর রাখুন। দৈনিক ২০-৩০ মিনিট পেপারের জন্য যথেষ্ট। ইউটিউবে দেখতে পারেন কোনো বিষয় নিয়ে অস্পষ্টতা থাকলে।আমি ৩৭তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষায় আন্তর্জাতিকে ১০০ এর মধ্যে ৬৫ নম্বর পেয়েছি মূলত এভাবেই।

বিজ্ঞান

উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ বিজ্ঞান বইটি সংগ্রহ করতে পারলে চমৎকার হবে। বইটি নবম-দশম শ্রেণির সাধারণ বিজ্ঞান বইটির চেয়েও গুছিয়ে লেখা।বিশ্বাস না হলে এক পলক লেখাগুলো পড়লেই আমার কথার সত্যতা অনুধাবন করতে পারবেন। হার্ড কপি লাইব্রেরিতে সাধারণত পাওয়া যায় না এমনকি নীলক্ষেতেও নেই তাই সফট কপি প্রিন্ট করে নিতে পারেন সম্পূর্ণ বা কিছু চ্যাপ্টার। যদি করতে না চান তাহলে নবম-দশম শ্রেণির সাধারণ বিজ্ঞান বইটি ২ বার রিডিং পড়ে ফেলুন কিছু চ্যাপ্টার বাদ দিন যেটা লিখিত পরীক্ষায় নেই।

গণিত

প্রিলির প্রস্তুতির পাশাপাশি বিগত লিখিত পরীক্ষার গণিত প্রশ্ন ২-৩টি বা সর্বোচ্চ ৫ টি সলভ করুন রেগুলার।বিসিএস পরীক্ষা ও অন্যান্য পরীক্ষাতেও কাজে দিবে এই কৌশল।

মানসিক দক্ষতার জন্য বিগত প্রিলির প্রশ্নের সাথে বিগত রিটেনের প্রশ্ন সলভ করুন। আর কিচ্ছু লাগবে না লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার সময়ে।

কেউ যদি সবগুলো বিষয়ে BCS preliminary and written preparation নিতে না চান তাহলে মূল তিনটি বিষয় : ইংরেজি, গণিত ও বিজ্ঞান উপরের পদ্ধতি অনুযায়ী পড়তে পারেন। আসলে আপনার চাকরি পাওয়া না পাওয়া এই তিনটি বিষয় দ্বারাই নির্ধারিত হয়।

আপনি যদি প্রিলির সময় শুধু প্রিলির প্রস্তুতি নিতে চান তাহলেও সমস্যা নেই তবে সেটা যেন বুলেটপ্রুফ একটা প্রস্তুতি হয় নইলে রিটেনে আপনার মনের জোর কমে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।

আবারও মনে করিয়ে দিচ্ছি রিটেনের পড়া যেন দিনে সর্বোচ্চ এক ঘণ্টা বা প্রিলির পড়ার ১০-২০% এর বেশি না হয়।

লেখাটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।

নিরন্তর শুভ কামনা।

শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

Leave a Reply

Your email address will not be published.