বিসিএস প্রিলিমিনারি প্রস্তুতি : বুলেটপ্রুফ স্ট্র্যাটেজি

By | 08/10/2020
বিসিএস প্রস্তুতি বুলেটপ্রুফ

(আপডেট : ২৯-৮-২০২৩)

BCS preliminary preparation যাচাই করার প্রথম ধাপ হচ্ছে বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা। যেহেতু এটা নিয়োগ প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপ তাই মনে হতেই পারে এটা সবচেয়ে সহজ ধাপ। ছোটবেলায় আমিও সেটাই ভাবতাম; ছোটবেলা মানে বছরখানেক আগে। পরে বুঝতে পারলাম প্রিলিমিনারির ধাপই হচ্ছে বিসিএস এর সবচেয়ে কঠিন ধাপ কারণ মোট পরীক্ষার্থীর প্রায় ৯৫% বাদ পড়ে যায় এই প্রিলিতেই! মনে করুন, আড়াই লাখ চাকরিপ্রার্থী পরীক্ষা দিবে, ১০ হাজার পাস করবে অর্থাৎ বাদ পড়ে যাবে ২ লাখ ৪০ হাজার! আর রিটেনে ৫০% নম্বর পেলেই পাস–পাস করার জন্য কারো সাথে কারো কম্পিটিশন হয় না তবে রিটেনে বেশি নম্বর পেলে পছন্দের ক্যাডার পাবার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। আর সর্বশেষ ধাপ ভাইভাতে ২০০ তে ১০০ নম্বর পেলে পাস। ভাইভাতে সাধারণত নম্বরের পার্থক্য তেমন হয় না তাই যা করার রিটেনেই করতে হবে কারণ আপনার আছে মিনিমাম ৯০০ নম্বরে নিজেকে প্রমাণ করার সুবর্ণ সুযোগ। কিন্তু সবার আগে প্রিলিমিনারি নামের প্রথম ধাপটা অতিক্রম করতে হবে। দিনে দিনে প্রিলিমিনারি কঠিন, আনপ্রেডিক্টেবল হয়ে যাচ্ছে। তাই চলুন আমরা পড়াশুনায় মনোযোগ দেই যাতে পিএসসি যেই নিয়মই করুক না কেন আমরা সব সময় পার পেয়ে যাই।

অনেকে ভাবেন বেশি বেশি পড়লেই প্রিলি পাস করা যাবে যেটা ১০০% ভুল ধারণা। আপনি ২০০ পাওয়ার জন্য পরীক্ষা দিতে গেলে ফেল করে আসতে পারেন কিন্তু যদি ১২০ এর টার্গেটে যান তাহলে পাস করে ফেলতে পারেন। Proper strategy প্রিলিমিনারি পাসের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেমন আপনি এক বছরের কারেন্ট এফেয়ার্সের a to z পড়ে গেলেন কিন্তু এখান থেকে কয়টা প্রশ্ন আসতে পারে সেটা কি ভেবে দেখেছেন? বিসিএস প্রিলিমিনারি সিলেবাসে সাম্প্রতিক অংশে (বিশ্বের সাম্প্রতিক ও চলমান ঘটনাপ্রবাহ) মাত্র ৪ নম্বর থাকে! আবার বাংলাদেশ অংশের প্রশ্নগুলো “সাম্প্রতিক” মনে হতে পারে যদি লেটেস্ট ইনফরফেশন টাইপের প্রশ্ন আসে তাই তালগোল পাকনো যাবে না। ভেবেচিন্তে পড়তে হবে। সবার আগে বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার সিলেবাসটা প্রিন্ট করে দেখুন কোন বিষয়ে কত নম্বর আছে। প্রিন্ট করুন, পিসিতে/মোবাইলে থাকলে ছোট ছোট বিষয় চোখের আড়াল হয়ে যেতে পারে। শুধু সিলেবাস ভালভাবে বোঝার কারণেই অনেকে বেশি নম্বর পাবে। তাই টার্গেট হবে যেটাতে আউটপুট বেশি পাওয়া যাবে সেই দিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া। সাধারণ জ্ঞান (বাংলাদেশ এবং আন্তর্জাতিক) নিয়ে শত শত, হাজার হাজার ঘণ্টা পার করে দেবার কোন মানেই হয় না। এই effort ইংলিশ লিটারেচার বা ম্যাথে প্রয়োগ করুন, অনেক বেশি আউটপুট পাবেন। বেশি আউটপুট পাওয়া যেতে পারে এমন কয়েকটি সাবজেক্ট হচ্ছে গণিত, বিজ্ঞান, ইংরেজি সাহিত্য এবং কম্পিউটার। একটা কথা আছে–Focus on your strength অর্থাৎ আপনি যেই বিষয়গুলো ভাল পারেন সেগুলোর উপর জোর দিন। বিজ্ঞানের ছাত্র হলে ম্যাথ, বিজ্ঞান এবং কম্পিউটারের উপর ফোকাস করুন যাতে এগুলোতে অন্যদের চেয়ে নম্বর বেশি পান। ভুলেও এগুলো অবহেলা করবেন না তাতে বিশাল ক্ষতির আশংকা আছে। অন্য বিভাগের ছাত্র হলেও আপনার যেগুলোতে দক্ষতা বেশি সেগুলোতে জোর দিন। আবারও বলছি সিলেবাসটা প্রিন্ট করুন।

বিসিএস প্রিলিমিনারি প্রস্তুতি

বিসিএস প্রস্তুতি ম্যাথ ৩০

আমরা যেটাকে ম্যাথ বা গণিত বলি বিসিএস এর সিলেবাসে সেটাকে বলা হয় গাণিতিক যুক্তি, নম্বর ১৫। এর সাথে আছে মানসিক দক্ষতা, নম্বর ১৫। সোজা কথায় ম্যাথে ৩০ নম্বর। এই ৩০ নম্বরই হতে পারে আপনার জন্য ট্রাপ কার্ড। ২৫+ পেলে আপনি হাজার হাজার পরীক্ষার্থীর চেয়ে অনেক এগিয়ে থাকবেন। অনেক পরীক্ষার্থী আছেন যারা সব বিষয়ে পটু কিন্তু ম্যাথে খুবই নাজুক। আমাদের টার্গেট হবে তাদেরকে কুপোকাত করা। আপনি যদি আন্তর্জাতিকে ২০ এ ২০ বা কাছাকাছি পেতে চান তাহলে অনেক অনেক পড়তে হবে এবং প্রশ্ন কমন না পড়ার আশংকা তো আছেই। তাই we have to work smart, not hard.ম্যাথের জন্য রেগুলার প্র্যাকটিস করতে হবে। বিজ্ঞানের ছাত্রদের জন্য ম্যাথ তুলনামূলকভাবে অন্যদের চেয়ে easy লাগবে তাই বলে “পারি, পারি” করে হেলাফেলা করলে শেষে ধরা খাবেন, পঁচা শামুকে পা কাটবে। রেগুলার প্র্যাকটিস করতে হবে পরীক্ষার হলে quick করার জন্য। পরীক্ষার হলে গবেষণা করার টাইম পাবেন না। প্রিলিতে টাইম নিয়ে ম্যাথ পারার চেয়ে আপনি কত দ্রুত ম্যাথ করতে পারেন সেটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।গাণিতিক যুক্তির জন্য প্রফেসর’স এর বিসিএস প্রিলিমিনারি গাইড পড়তে পারেন, সুন্দরভাবে বিসিএস প্রিলিমিনারির সিলেবাস অনুযায়ী সাজানো। খাইরুল’স বেসিক ম্যাথ গাইডও দেখতে পারেন। খুবই জনপ্রিয় গাইড এটি। আর মানসিক দক্ষতার জন্য ওরাকলের রিটেন মানসিক দক্ষতার গাইড কিনবেন। ২৭তম বিসিএস থেকে ৪০তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষার মানসিক দক্ষতার প্রশ্নগুলো সলভ করবেন, বাকিগুলো করার কোন প্রয়োজন নেই। এর সাথে ৩৫তম থেকে ৪০তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার মানসিক দক্ষতার অংশটা দেখুন। রিটেন পরীক্ষাতেও এই মানসিক দক্ষতার পড়াগুলো বেশ কাজে দিবে। অতিরিক্ত আর কিছুই পড়তে হবে না তখনও।

বিসিএস প্রিলিমিনারি প্রস্তুতি গণিত নিয়ে বিস্তারিত গাইডলাইন

বিসিএস ইংরেজি প্রস্তুতি ৩৫

ইংলিশ লিটারেচার ১৫

ম্যাথের পর ইংলিশ লিটারেচার দেখে অনেকে অবাক হতে পারেন। আসলে অবাক হবারই কথা। আমার মতে বিসিএস প্রিলিমিনারির সবচেয়ে underestimated সাবজেক্ট হচ্ছে ইংলিশ লিটারেচার যেখানে আছে ১৫ নম্বর। ইংলিশ লিটারেচার রিটেনে নেই তাই হয়ত চাইবেন এটা সম্পূর্ণ বাদ দিতে; এটা খুবই রিস্কি হয়ে যায় কারণ গতানুগতিক প্রশ্ন হলে ১০-১২ নম্বর পাওয়া কোন ব্যাপারই না। প্রশ্ন কেমন হবে সেটা শুধু পিএসসি জানে। আর গতানুগতিক প্রশ্ন না হলেও সমস্যা নেই, আপনি অন্যদের চেয়ে তবুও বেশি পাবার যোগ্য। এখানে ভাল করার জন্য সাধারণ জ্ঞানের মত বেশি পরিশ্রম করতে হবে না। আপনি এখানে একটু জোর দিলেই অন্যদের চেয়ে এগিয়ে থাকবেন।

ইংলিশ লিটারেচারের জন্য এমন বই পড়বেন যেটাতে বিগত বছরের বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষার প্রশ্ন আছে। আসলে এই কথা সব বিষয়ের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্ন দেখে আপনাকে আইডিয়া নিতে হবে কী পড়তে হবে আর কী পড়তে হবে না–যারা পাস করেন আর যারা ফেল করেন তাদের অন্যতম পার্থক্য এটা। লিটারেচারে প্রাচীন যুগের তুলনায় মধ্যযুগ আর আধুনিক যুগ থেকেই বেশি প্রশ্ন আসে। Romantic, Renaissance, Jacobian age, Anglo-Saxon ইত্যাদি নামগুলো শুনে কেমন কেমন জানি লাগে। আমারও লাগত, ভয়ের কিছু নাই। কিছুদিন পর সব ঠিক হয়ে যাবে। শুধু লেগে থাকতে হবে।

পড়ার জন্য ABC of English literature নিয়ে আমার কোন ধারণা নেই তবে বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষার প্রশ্ন দেওয়া থাকলে কিনতে পারেন যেহেতু এটা পড়ার কথা কেউ কেউ সাজেস্ট করেছেন। ইংলিশ লিটারেচারের জন্য Miracle BCS English Literature (Mohammad Shakawoat Hossen) বইটা আমার বেশ ভাল লেগেছে। বিভিন্ন লেখকের নাম ধরে ধরে পড়ুন। সব লেখকের পড়তে হবে না। বিখ্যাত লেখকদের পড়বেন। মনে রাখবেন পড়তে পড়তে হারিয়ে যাওয়া যাবে না। ইংলিশ লিটারেচারে সাধারণত বাংলার মত গভীর প্রশ্ন আসে না (৪০তম বিসিএস ব্যতিক্রম) তাই লেখকদের বর্ণনা দুই একবার পড়েই বই এর বিগত পরীক্ষায় আসা প্রশ্নগুলো পড়া শুরু করবেন। তবে শেকসপিয়র আর বার্নার্ড শ নিয়ে বারবার পড়বেন। তাদের রচনাগুলোর বিষয়বস্তু, চরিত্র বারবার পড়বেন। মূল কথা Don’t underestimate the power of English literature.

ইংরেজি গ্রামার ২০

Barron’s TOEFL, Cliff’s TOEFL, GRE এরকম ডজন ডজন বই পড়ে স্নায়ুতন্ত্রের একক নিউরন ভর্তি করার কোন মানেই হয় না। বিসিএস প্রিলিমিনারি প্রস্তুতির জন্য English for Competitive Exams (Md. Fazlul Haque) বইটিই যথেষ্ট। এমনকি আপনি যদি বইটির ৫০% পড়ে ফেলতে পারেন সেটাও অনেক। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নগুলো না পড়লেও চলবে, শুধু বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষার প্রশ্নগুলো পড়েন তাতেই হবে। Synonym, Antonym এর জন্য শুধু বিগত বিসিএস এর প্রশ্নগুলো পড়েন। বেশিরভাগ মানুষের ভকাবুলারি পড়তে ভাল লাগে না তাই এটুকুই পড়েন। ভাবছেন এত কম পড়লে হবে কি? হবে। পাস করার পর কেউ কেউ তো পারলে নীলক্ষতের সব বইয়ের নাম ধরিয়ে দেন। এক সময় আমার কথার তাৎপর্য বুঝতে পারবেন; তখন ধন্যবাদ দিবেন।আর গ্রামার পড়ার খুব ইচ্ছা হলে পিসি দাসের Applied English Grammar and Composition বইটা পড়তে পারেন। কেনার সময় লম্বা সাইজেরটা কিনবেন। তবে মনে রাখবেন বেসিক ইংরেজি জ্ঞান এবং বিগত সালের প্রশ্নগুলো সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ বিসিএস প্রিলিমিনারি ইংরেজি অংশের প্রস্তুতির জন্য।

বিসিএস বিজ্ঞান প্রস্তুতি ১৫

যারা বিজ্ঞানের ছাত্র তাদের জন্য বিজ্ঞান একটা প্লাস পয়েন্ট। প্রশ্ন কঠিন হলেও বিজ্ঞানের ছাত্ররা কিছু সুবিধা পাবে তবে অন্য ব্যাকগ্রাউন্ডের ছাত্রদের কোন ভয় নাই। সবার আগে নবম-দশম শ্রেণির বিজ্ঞান বইটা রিডিং পড়ে ফেলুন সিলেবাসের টপিক অনুযায়ী এক বা দুই বার। ভয় নাই, সব অধ্যায় পড়তে হবে না। অনেক ভুলে যাওয়া জিনিস মনে আসবে আর রিটেনে এটা খুবই কাজে দিবে; আবারও বলছি খুবই কাজে দিবে। তারপর বিসিএস প্রিলিমিনারি প্রস্তুতির জন্য প্রফেসর’সের গাইড থেকে বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষার প্রশ্নগুলো সলভ করুন, যুক্তি বোঝার ট্রাই করুন, না বুঝলে ইংরেজিতে বা বাংলায় গুগলে সার্চ করুন। কিছু লিস্ট টাইপের প্রশ্ন যেমন সমুদ্রের গভীরতা মাপার যন্ত্রের নাম কী? এগুলো অনেকবার আসে। আপনি এই টাইপের বিভিন্ন নাম শিখে ফেলুন। ব্যাকটেরিয়া বাহিত রোগ নাকি ভাইরাস বাহিত রোগ এরকম প্রশ্নও আসে। আশা করি ধরতে পেরেছেন। না ধরতে পারলে, আমি তো আছিই।

বিসিএস কম্পিউটার প্রস্তুতি ১৫

এটাও খুব গুরুত্বপুর্ণ বিষয়। মেয়েদের চেয়ে ছেলেরা এখানে এগিয়ে থাকবে। কম্পিউটারভীতি অনেকের আছে তাই আপনার এই সুযোগটা কাজে লাগাতে হবে। এর জন্য ইজি কম্পিউটার বা প্রফেসর’সের বিজ্ঞান বই এর কম্পিউটার অংশ দেখতে পারেন। ওরাকলের বিজ্ঞানের সাথে কম্পিউটার নাই তাই আলাদা কিনতে পারেন; ওরাকলও ভাল হবার কথা। আর একটা কাজ করতে হবে সেটা হচ্ছে নিয়মিত পেপারের তথ্য প্রযুক্তি অংশ পড়া। এটা পড়লে আপনি সাম্প্রতিক অনেক তথ্য জেনে যাবেন যেটা খুব কাজে দিতে পারে। প্রথম আলোর “বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি” অংশ দেখতে পারেন। আমি তো ৩৭তম বিসিএস প্রিলিমিনারির একটা প্রশ্ন যেটার উত্তর “Google Street View” সেটা এক ফেসবুক ফ্রেন্ডের স্ট্যাটাসের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। আমার ফ্রেন্ড লিস্টে টেকি ফ্রেন্ড ভরপুর।

বিসিএস বাংলা প্রস্তুতি ২০

বাংলা নিয়ে অনেকে অহেতুক ভয় পায়। চর্যাপদ, চণ্ডীদাস এসব নাম শুনেই হৃদকম্পন বেড়ে যায়। আসলে প্রাচীন আর মধ্যযুগ অংশে মাত্র ৫ নম্বর আর আধুনিক অংশ যেখানে কবি লেখকদের নামগুলো পরিচিত পরিচিত লাগে মানে মানুষের নামের মত মনে হয় সেখনেই আছে ১৫ নম্বর। প্রাচীন আর মধ্যযুগে নতুন কোন কিছু সৃষ্টি হবে না তাই সেখানে ঘুরে ফিরে কিছু প্রশ্নই আসে। যদি কমন না আসে ৩৭ এর মত অবাস্তব টাইপের প্রশ্ন আসে তাহলেও কোন সমস্যা নাই কারণ কেউ পারবে না এবং আপনিও পারবেন না, তাই ভয়ের কিছু নাই। আধুনিক অংশে বেশি মনোযোগ দিন। পিএসসি কর্তৃক দেওয়া ১১ জন লেখকের উপর খুব গুরুত্ব দিন, গভীরভাবে তাদের নিয়ে পড়ুন। তাদের ছাড়া বিসিএস প্রশ্ন হয়নি, হয়না এবং হবেও না এরকম আশা করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। আর আপনি তো বুদ্ধিমান আমি জানি। প্রফেসর’স এর গাইডটা পড়ুন, সুন্দরভাবে গুছানো। কবি, সাহিত্যিক ধরে পড়া শুরু করতে পারেন বা বিগত সালের বিভিন্ন চাকরি পরীক্ষার প্রশ্ন দিয়েও শুরু করতে পারেন। আর রেফারেন্স হিসেবে অবশ্যই রাখবেন নবম-দশম শ্রেণির বাংলা ব্যাকরণ বইটি।

বিসিএস বাংলাদেশ প্রস্তুতি ৩০

সাধারণ জ্ঞানের দুইটি অংশ—বাংলাদেশ এবং আন্তর্জাতিক। প্রথমেই বলি সাধারণ জ্ঞানে অসাধারণ হবার চেষ্টা করা নিষ্প্রয়োজন। গাদা গাদা কারেন্ট এফেয়ার্স গোগ্রাসে গেলার কোন মানেই হয় না। বড়জোর পরীক্ষার আগের তিন থেকে চার মাসের কারেন্ট এফেয়ার্সের প্রথম দিকে থাকা ৫০টার মত MCQ টাইপ প্রশগুলো পড়ে যাবেন এবং সাথে সেই তিন-চার মাসের বিভিন্ন চাকরি পরীক্ষার প্রশ্ন। তবে সবার আগে সিলেবাসে বাংলাদেশ অংশ দেখুন। হাজার বছর আগের সময়কাল থেকে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত সময়ে মাত্র ৬ নম্বর বরাদ্দ আছে! দেখেছেন? এগুলো বেশি বেশি পড়ে কি সময় নষ্ট করেছেন? মুক্তিযুদ্ধের জন্য একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির পৌরনীতি ও সুশাসন (২য় পত্র) বইয়ের মুক্তিযুদ্ধ অংশ পড়ুন। মুক্তিযুদ্ধ গাইডের চেয়ে এখান থেকে পড়লে বেশি মজা লাগবে এবং মনেও বেশি থাকবে। তবে প্রশ্ন অনুশীলনের জন্য বিগত প্রশ্ন মাস্ট তাই গাইডকে একেবারে বিদায় জানানো যাবে না। সবচেয়ে বড় কথা রিটেনের অনেক প্রশ্ন দেখলে মনে হবে যেন এই বই থেকেই মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নগুলো করা হয়েছে!!! বাকি অংশ যেমন জনসংখ্যা, অর্থনীতি, সংবিধান এসব অংশে পড়া কম কিন্তু নম্বর তুলনামূলকভাবে বেশি তাই এখানেই জোর দিতে হবে। সংবিধান কিন্তু তোতা পাখির মত সব মুখস্থ করতে হবে না, নির্দিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ অনুচ্ছেদ পড়লেই হবে। সংবিধান পড়বেন আরিফ খানের “বাংলাদেশের সংবিধান” থেকে। প্রফেসর’সের গাইডটা ভাল, সুন্দরভাবে সিলেবাস অনুযায়ী গোছানো। কেউ কেউ স্লিম সাইজের এম পি থ্রি (জর্জেরটা না; জর্জেরটা ভাল হতে পারে) পড়তে চায় তবে আমি এম পি থ্রি তেমন পছন্দ করি না। সম্প্রতি এদের গাইডে যদি আমূল পরিবর্তন না করে থাকে তাহলে প্রফেসর’স বেটার অপশন। তবে এম পি থ্রি পড়লে যে আপনি ফেল করবেন এমন কোন কথা বা যুক্তি নেই। মূল কথা পড়তে হবে উৎস যাই হোক না কেন; সর্বনিম্ন একটা পরিমাণ আপনাকে পড়তেই হবে।

বিসিএস আন্তর্জাতিক প্রস্তুতি ২০

এটাতেও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ হওয়া নিষ্প্রয়োজন। সারা দুনিয়ার সব দেশের মুদ্রার নাম শেখার কোনো দরকার নেই। ৩৫ থেকে নতুন সিলেবাস। যেসব টপিক থেকে প্রশ্ন একদমই আসেনি সেগুলোর গুরুত্ব অনেক কম তাই বাদ দিতে পারেন বিসিএস এর জন্য। সিলেবাসের পরিবেশগত ইস্যু অংশটা ভালোভাবে পড়ুন। এখানে পড়া কম তূলনামূলক। টিভির ব্রেকিং নিউজ দেখুন, পত্রিকায় কিছুটা চোখ রাখুন এবং সর্বপ্রথমে বিগত সালের বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নগুলো খুব ভালোভাবে পড়ুন। মনে রাখবেন সাধারণ জ্ঞান কখনই আপনাকে প্রিলি পাসের জন্য বড় কোন সাহায্য করতে পারবে না তাই এখানে মাত্রাতিরিক্ত সময় দেওয়া নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারারই নামান্তর। তাই সীমিত আকারে আন্তর্জাতিক পড়ুন বিসিএস প্রিলিমিনারি প্রস্তুতির জন্য। প্রফেসর’স এর গাইডটা যথেষ্ট বিসিএস প্রিলিমিনারি প্রস্তুতির জন্য।

বিসিএস প্রস্তুতি ভূগোল ১০

প্রফেসর’স অথবা যেকোন নির্ভরযোগ্য গাইড থেকে পড়ুন। এটা নিয়ে খুব বেশি টেনশন করার প্রয়োজন নেই। নবম-দশম শ্রেণির ভূগোল ও পরিবেশ বইয়ের “বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ” অধ্যায়টা পড়তে পারেন। তবে ভূগোল নিয়ে বেশি টাইম নষ্ট করা যাবে না।

নৈতিকতা ও মূল্যবোধ ১০

হঠাৎ দুইটা জমজ বাচ্চাকে দেখলে তাদের আলাদা করে চেনা যেমন জটিল ঠিক তেমনি পরীক্ষার হলে নৈতিকতা ও মূল্যবোধের প্রশ্নগুলো জটিল মনে হয় কারণ প্রায় সব অপশন একই মনে হয়। সোজা কথা, ৩৫তম বিসিএস থেকে ৪০তম বিসিএস প্রিলিমিনারির প্রশ্নগুলোর নৈতিকতা ও মূল্যবোধ অংশ সলভ করুন আর কিছু না পড়লেও হবে। আমরা ২০০ নয় বরং ১৯০ তে পরীক্ষা দেবার জন্য যাব এবং সফল হব ইনশাল্লাহ।

বিসিএস প্রস্তুতি রুটিন : কীভাবে পড়বেন

বই বা গাইড কেনা শেষ, এবার পড়ার পালা। কেউ কেউ এক বিষয় দিনের পর দিন, মাসের পর মাস পড়তে থাকেন। এটা চরম বোকামি কারণ এভাবে পড়লে আপনি ১-২ মাস পর পেছনের সব পড়া ভুলে গিয়ে আরও ভয় পাবেন, আত্মবিশ্বাস কমে যাবে। তাই প্রতিদিন মিনিমাম ২-৩টি বিষয় পড়ুন। আর খেয়াল রাখবেন সপ্তাহে সব বিষয় যেন অন্তত এক বার পড়া হয়। রেগুলার ম্যাথ করুন ৩০-৬০ মিনিট। ম্যাথে দুর্বল হলে সকালে ফ্রেশ মগজে ম্যাথ করুন।

শুক্রবার

শনিবার

রবিবার

সোমবার

মঙ্গলবার

বুধবার

বৃহস্পতিবার

গণিত
ইংলিশ গ্রামার বাংলা সাহিত্য সাধারণ বিজ্ঞান 

গণিত
ইংরেজি সাহিত্য বাংলা সাহিত্য কম্পিউটার 

গণিত
বাংলা্দেশ
আন্তর্জাতিক
সাধারণ বিজ্ঞান

গণিত
ইংলিশ গ্রামার
ভূগোল
সাধারণ বিজ্ঞান

গণিত
ইংরেজি সাহিত্য
বাংলা ব্যাকরণ
কম্পিউটার

গণিত
বাংলাদেশ
আন্তর্জাতিক
সাধারণ বিজ্ঞান

গণিত
ইংলিশ গ্রামার
সাধারণ বিজ্ঞান
কম্পিউটার

জব সলিউশন পড়ার নিয়ম

আপনি চাইলে সিরিজের পাশাপাশি জব সলিউশন পড়তে পারেন তবে সেটা যেন মাত্রারিক্ত না হয়ে যায়। আসলে সিরিজ ভালোভাবে পড়লে জব সলিউশন না কিনলেও চলে। জব সলিউশন পড়তে চাইলে প্রতিদিন বা এক দিন বা দুই দিন পরপর ২-৩টা প্রশ্ন সলভ করুন। মূলত প্রশ্ন নিয়ে আইডিয়া পাওয়ার জন্য এটা করতে পারেন। সিরিজে তো চ্যাপ্টার অনুযায়ী প্রশ্ন থাকে তাই সম্পূর্ণ প্রশ্ন নিয়ে ধারণা কিছুটা আবছা থেকে যেতে পারে। মনে রাখবেন জব সলিউশন যেন ফাউন্ডেশন না হয় কারণে এখানে অনেক সাব্জেক্ট যেমন মানসিক দক্ষতা, বিজ্ঞান, কম্পিউটার ইত্যাদি বিষয় নিয়ে খুব বেশি প্রশ্ন পাবেন না। উপরের ভিডিওটি দেখুন; সেখানে এটা নিয়ে বিস্তারিত আলাপ করেছি। এখন আপনার জিজ্ঞাসা হচ্ছে জব সলিউশন কোনটা ভালো? অবশ্যই প্রফেসর’স জব সলিউশন পড়বেন যদি জব সলিউশন পড়তে চান। জব সলিউশন এর পিডিফ (Job Solution PDF) না খুঁজে কাগজের হার্ডকপি কিনুন। এটাই মনে রাখতে ও রিভিশন দিতে বেশি কার্যকরী। আর পুরো জব সলুশন যদি প্রিন্ট করতে যান তাহলে কিন্তু প্রচুর খরচ পড়বে। বাজারে প্রফেসর’স জব সলিউশন দাম পড়বে ৫০০-৬০০ টাকার মতো বা কিছু বেশি হতে পারে। তাহলে কাজে লেগে পড়ুন।

আর আপনার হাতে যখন ৩ মাস সময় থাকবে তখন কীভাবে বিসিএস প্রিলিমিনারি প্রস্তুতি নিবেন সেটার জন্য এই ভিডিয়োটি দেখুন

মডেল টেস্ট দেবার সময় এখন

পরীক্ষার দুই মাস বা অন্তত এক মাস আগে থেকে মডেল টেস্ট দেওয়া শুরু করুন যাতে আপনার অবস্থা খারাপ হলেও ভালো প্রস্তুতি নেবার সময় হাতে থাকে।

এবার আসি আসল কথায়।

কতটুক নিশ্চিত হলে উত্তর করবেন Exam Hall Strategy

আন্দাজে ঢিল মারা আর করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সাথে মাস্ক ছাড়া আড্ডা দেওয়া একই কথা। আপনি যা জানেন না তা ভুল হবে সেটাই স্বাভাবিক। “যদি লাইগা যায়” এই থিওরি থেকে বের হয়ে আসুন। প্রিলি লটারি না; মেধা, স্ট্র্যাটেজি আর ভাগ্যের সমন্বয়। তাই ৫০% বা এর চেয়ে বেশি নিশ্চিত থাকলে দাগান, প্রশ্ন যতই কঠিন হোক আর সহজ হোক দিনশেষে আপনি লাভবানই হবেন ইনশাল্লাহ। এটাই আমার অভিজ্ঞতা মতে বেস্ট স্ট্র্যাটেজি। আমি আগে ১০০% নিশ্চিত না হলে দাগাতাম না এবং নম্বর কম আসত তাই স্ট্রাটেজি চেঞ্জ করলাম নম্বর অনেক বেড়ে গেল। ১০০% নিশ্চিত হতে গেলে আপনি নিজেই নিজেকে মানসিক চাপে ফেলে দিবেন। অত্যধিক চাপের কারণে নম্বর অনেক কমে আসতে পারে। তাই বুলেটপ্রুফ স্ট্র্যাটেজি সেট করতে হবে। বারবার পরীক্ষা দিয়ে নিজের স্ট্র্যাটেজি “অব্যর্থ” করতে হবে।

পরীক্ষার দিন : অগ্নিপরীক্ষা

বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার দিন প্রশ্ন হাতে পেয়ে এন্সার করার সময়েই বুঝে ফেলতে হবে প্রশ্ন কঠিন, না সহজ বা কেমন। এটা বোঝার ক্ষমতা যাদের সৃষ্টি হবে তারা অন্যদের চেয়ে অনেক এগিয়ে থাকবেন। যারা বুঝবেন না, তারা বেশি নম্বর পাবার জন্য মানসিক চাপে ফেটে যাবে এবং নেগেটিভ মার্কিং এর ফাঁদে পড়ে যেতে পারে। যারা বুঝতে পারবেন, তারা সাইকেল চালানোর মত ব্যালেন্স রাখতে পারবেন, রেজাল্টের দিন বিজয়ের হাসি দিতে পারবেন।

পরীক্ষার হলে কাট অফ মার্ক বের করার পদ্ধতি

পরীক্ষার প্রশ্নে বাংলা, ইংরেজি ও সাধারণ জ্ঞান “দ্রুত” দেখে যদি মনে হয় বিগত বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষার প্রশ্ন প্রাধান্য পেয়েছে, তাহলে আশা করা যায় কাট অফ মার্ক ১০৮-১১০ এর মত হবে। আর যদি মনে হয় বিগত প্রশ্নের চেয়ে নতুন বা প্যাঁচানো প্রশ্নের প্রাধান্য আছে, তাহলে আশা করা যায় কাট অফ মার্ক ৯৫-১০০ হবে। এটা একটা প্রাথমিক ধারণা। ধারণাটি পেতে এক-দেড় মিনিট বা আরও কম সময় লাগবে। পরীক্ষার শুরুতেই ধারণাটি পেলে সেটা পজিটিভ রেজাল্ট বয়ে আনতে পারে। আমি ৩৭তম-৪১তম প্রতিটি পরীক্ষার শুরুতেই এই কাজটি করেছি এবং সেই অনুযায়ী এগিয়েছি এবং সফলও হয়েছি। যেমন আগে থেকে যদি জানেন এক কি.মি হাঁটতে হবে নাকি ১০ কি.মি. হাঁটতে হবে তাহলে মানসিকভাবে সেভাবেই একটা set up চলে আসবে। আশা করি বোঝাতে পেরেছি। তবে প্রাথমিক ধারণার পরও আপনাকে প্রতিটি প্রশ্ন তার “মান” অনুযায়ী বিচার-বিশ্লেষণ করে উত্তর করতে হবে।

আর কথা বাড়াচ্ছি না, মাত্র একটি আর্টিকেল লিখে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সব কিছু বোঝান প্রায় অসম্ভব। ছোটখাট বিষয়গুলো বাদ থেকেই যায়।

শেষ কথা

BCS preliminary preparation এর জন্য আনকমন কিছু করার দরকার নাই। সবাই যে প্রশ্নগুলো পারবে সেগুলো আপনাকে পারতেই হবে নইলে অনেক পিছে পড়ে যাবেন। প্রিলি সহজভাবে চিন্তা করুন, সহজেই পাস করে যাবেন ইনশাল্লাহ। সবার জন্য অজস্র শুভ কামনা।

কোন পরিশ্রমই বৃথা যায় না। আমি যাদের পরিশ্রম করতে দেখেছি এবং “যাদের বেসিক ওকে” আছে তারা কেউ ব্যর্থ হয় নি; আপনিও সফলতার রঙিন মুখ দেখবেন ইনশাল্লাহ আজ, কাল অথবা তারপর কোন একদিন। মাটি কামড়ে পড়ে থাকুন, কারও কটু কথায় কান দিবেন না। যদি কোন দিন দিগন্তের ওপারে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেন, তাহলে……………………

ধন্যবাদ এবং আবারও অজস্র শুভ কামনা।

শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

Leave a Reply

Your email address will not be published.